বাংলাদেশ ক্বিরাত ইন্সটিটিউট/ معهد القراءات بنغلاديش/Institute of Quranic Science and Phonetics Bangladesh-হলো বাংলাদেশের সর্বপ্রথম ও একমাত্র স্বতন্ত্র ‘ইলমে ক্বিরাতের’ প্রতিষ্ঠান। উপমহাদেশের অন্যতম বিখ্যাত আলেমে দ্বীন, ওলিকুলের শিরোমণি হযরত মাওলানা মুহাম্মাদুল্লাহ হাফেজ্জি হুযুর(রহঃ)যিনি পানিপথের একজন ক্বারী ছিলেন এবং তৎকালীন পূর্বপাকিস্তানের (বাংলাদেশ) প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন মাওলানা মুফতি দীন মুহাম্মাদ খান(রহঃ), উভয়েই স্বপ্ন দেখেছিলেন বাংলাদেশের প্রতিটি অঞ্চলে প্রতিটি ঘরে বিশুদ্ধ কুরআন তিলাওয়াতের আওয়াজ পৌঁছানোর মাধ্যমে এর শিক্ষা দেওয়া। হযরত হাফেজ্জি হুযুর(রহঃ) এবং মুফতি দ্বীন মুহাম্মাদ খান(রহঃ) উভয়েই তাঁদের এই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করার লক্ষে, যখনই পশ্চিম পাকিস্তানে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তৎকালীন এশিয়া মহাদেশের অন্যতম প্রসিদ্ধ ক্বারী হযরত মাওলানা ক্বারী মুহাম্মাদ ইউসুফ হাফিযাহুল্লাহ এর সাথে সাক্ষাৎ হতো উভয়ই তখন অনুরোধ করতেন পূর্বপাকিস্তানে এসে বিশুদ্ধ তিলাওয়াত ও ক্বিরাতের এই ফন(সাবজেক্ট)কে শুরু করার জন্য। হযরত মাওলানা ক্বারী মুহাম্মাদ ইউসুফ হাফিযাহুল্লাহ পূর্ব পাকিস্তানের (বাংলাদেশ) চট্রগ্রামের সন্তান, পরবর্তীতে তিনি করাচির বাসিন্দা ছিলেন, যিনি ১৯৬৩ সালে মালয়েশিয়াতে অনুষ্ঠিত ৩য় আন্তর্জাতিক ক্বিরাত প্রতিযোগিতায় দক্ষিন এশিয়ার প্রথম ও শেষ ব্যক্তি হিসেবে স্বর্ণপদক অর্জন করেন, যিনি করাচি রেডিও এবং পাকিস্তান টেলিভিশন(পিটিভি) এর ক্বারী ছিলেন, পিটিভি তে নিয়মিত তিলাওয়াত করার দরুন তিনি সমগ্র এশিয়া মহাদেশে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আন্তর্জাতিক ক্বিরাত সম্মেলন ও সেমিনারে অংশগ্রহন করেন। হযরত মাওলানা মুহাম্মাদুল্লাহ হাফেজ্জি হুজুর(রহঃ) এবং হযরত মাওলানা মুফতি দ্বীন মুহাম্মাদ খান(রহঃ) এর অনুরোধের পরেও ক্বারী মুহাম্মাদ ইউসুফ হাফিযাহুল্লাহ পিটিভি ও করাচি রেডিওর অর্পিত দায়িত্ব এবং তৎকালীন বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ক্বারীদের সংগঠন “আন্তর্জাতিক কুরআন তিলাওয়াত সংস্থা (ইক্বরা)” এর এক্সিকিউটিভ মেম্বার হিসেবে বিভিন্ন কার্যক্রমে জড়িত থাকার কারনে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও আসতে পারেননি। হযরত মাওলানা ক্বারী মুহাম্মাদ ইউসুফ হাফিযাহুল্লাহ ১৯৬৬ সালের ঐতিহাসিক ৬দফা আন্দোলনের অন্যতম আয়োজক ছিলেন এবং ১৯৭১ সালে সংগঠিত মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের অন্যতম সংগঠক থাকায় ২৬ মার্চ ১৯৭১ সালে পাকিস্তান রেডিও টেলিভিশন (পিটিভি) এবং করাচি রেডিও থেকে বহিষ্কৃত হন এবং তাঁর উপর গ্রেপ্তারী পরোয়ানা জারি করা হয়। তারপর তিনি সবকিছু ত্যাগ করে বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করেন। ১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বর মাসেই হযরত মাওলানা হাফেজ্জি হুযুর(রহঃ), হযরত মুফতি দ্বীন মুহাম্মাদ খান(রহঃ), উর্দুরোড জামে মাসজিদের ইমাম হাফেয মাওলানা মীর আহমাদ(রহঃ) এবং হযরত ক্বারী মুহাম্মাদ ইউসুফ হাফিযাহুল্লাহ এর উদ্যোগে ঢাকার উর্দুরোড জামে মাসজিদে বাংলাদেশের সর্বপ্রথম ও একমাত্র স্বতন্ত্র ‘ইলমে ক্বিরাতের’ প্রতিষ্ঠান হিসেবে “মাদরাসা দারুল কুরআন বাংলাদেশ” নামে এর কার্যক্রম শুরু হয়। প্রতিষ্ঠার সময় আরো ছিলেন খতিবে আজম মাওলানা সিদ্দিক আহমাদ(রহঃ)। প্রতিষ্ঠালগ্নেই হযরত ক্বারী মুহাম্মাদ ইউসুফ হাফিযাহুল্লাহ এর সাথে তখন শিক্ষক হিসেবে আরও ছিলেন নূরানি শিক্ষার পথিকৃৎ হযরত মাওলানা বেলায়েত সাহেব(রহঃ)। ১৯৭২ সালে হযরত মাওলানা ক্বারী মুহাম্মাদ ইউসুফ হাফিযাহুল্লাহ কে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের প্রধান ক্বারী অর্থাৎ বাংলাদেশের শাইখুল কুররা হিসেবে নিযুক্ত করেন।যার দায়িত্ব অর্পিত হয় বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশন এর প্রধান ক্বারী হিসেবে। প্রতিষ্ঠার ৩ বছর পর উর্দুরোড জামে মাসজিদ হতে এর কার্যক্রম চকবাজার শাহী মাসজিদে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে শাইখুল কুররা ক্বারী মুহাম্মাদ ইউসুফ হাফিযাহুল্লাহ এর সাথে শিক্ষক হিসেবে আরও যোগ দেন বাংলাদেশের প্রখ্যাত ক্বারী, হযরত মাওলানা ক্বারী ওবায়দুল্লাহ (রহঃ)। হযরত হাফেজ্জী হুজুর(রহঃ), শাইখুল কুররা ক্বারী মুহাম্মাদ ইউসুফ হাফিযাহুল্লাহ কে অত্যন্ত ভালোবাসার কারনে তিনি সবসময় হাফেজ্জী হুজুর(রহঃ) এর কাছকাছি থাকার চেষ্টা করতেন, যারফলে তিনি হযরতের নিকট আশেপাশে থাকার ইচ্ছে পোষণ করলে হাফেজ্জী হুজুর(রহঃ) তাঁকে লালবাগ কিল্লারমোড় মাক্কী মাসজিদের কথা বলেন, পরবর্তীতে হযরতের পরামর্শক্রমেই ৮০’র দশকের শুরু হতে লালবাগ কিল্লারমোড় মাক্কী মাসজিদে এর কার্যক্রম পরিচালিত হতে থাকে।পরে সেখানে শিক্ষক হিসেবে আরও যোগ দেন দারুল উলূম দেওবন্দ এর ক্বিরাত বিভাগের সনদপ্রাপ্ত হযরত মাওলানা ক্বারী গরীবুল্লাহ (রহঃ)। ২০০৩ সালে শাইখুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক(রহঃ) এবং খতীব আল্লামা ওবায়দুল হক (রহঃ)এর দোয়ার মাধ্যমে “মাদরাসা দারুল কুরআন বাংলাদেশ” এর নাম পরিবর্তন করে “বাংলাদেশ ক্বিরাত ইন্সটিটিউট (معهد القراءات بنغلاديش)” রাখা হয়। ২০১২ সাল পর্যন্ত কিল্লারমোড় মাক্কী মাসজিদে এর কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে। বর্তমানে লালবাগের মাসজিদুল গফুর-এ এর কার্যক্রম আবাসিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে । ২০১২ সালে শাইখুল কুররা হযরত মাওলানা ক্বারী মুহাম্মাদ ইউসুফ হাফিযাহুল্লাহ এর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে উনার সুযোগ্য সাহেবজাদা মাওলানা ক্বারী শাইখ আহমাদ বিন ইউসুফ আল আযহারী হাফিযাহুল্লাহ কে বাংলাদেশ ক্বিরাত ইন্সটিটিউট(معهد القراءات بنغلاديش) এর পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব অর্পণ করেন। মাওলানা ক্বারী শাইখ আহমাদ বিন ইউসুফ আল আযহারী হাফিযাহুল্লাহ বর্তমান বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ক্বারী যিনি মিশরের আল আযহার-এ ১০ ক্বিরাত এর উপর পড়াশুনা করে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) থেকে ধারাবাহিকভাবে সর্বোচ্চ সনদ পেয়েছেন। বাংলাদেশ ক্বিরাত ইন্সটিটিউট(معهد القراءات بنغلاديش) বাংলাদেশের প্রথম ও একমাত্র স্বতন্ত্র ইলমে ক্বিরাতের প্রতিষ্ঠান যেখানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীদের অনলাইনে বিশুদ্ধ কুরআন তিলাওয়াত শিক্ষা দেয়া হয়। বর্তমানে ক্বিরাত বিভাগে বাংলাদেশী ছাত্রদের পাশাপাশি বিদেশি ছাত্ররাও পড়াশুনা করছে। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই বাংলাদেশের সমস্ত ক্বারীগণ, বিভিন্ন অঞ্চল থেকে উলামায়ে কেরাম, বিভিন্ন মাসজিদের ইমাম ও খতীব, বিভিন্ন মাদরাসার শিক্ষকগণ সহ সাধারণ মানুষজন বাংলাদেশ ক্বিরাত ইন্সটিটিউট(معهد القراءات بنغلاديش)-এ শাইখুল কুররা হযরত মাওলানা ক্বারী মুহাম্মাদ ইউসুফ হাফিযাহুল্লাহ এর কাছ থেকে বিশুদ্ধ কুরআন তিলাওয়াত ও ক্বিরাতের তা’লীম নিয়ে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সুনামের সহিত কাজ করছেন।