প্রতিষ্ঠানের পরিচিতি

“বাংলাদেশ ক্বিরাত ইন্সটিটিউট/ معهد القراءات بنغلاديش/Institute of Quranic Science and Phonetics Bangladesh” ১৯৭১ সালে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশের সর্বপ্রথম ও একমাত্র স্বতন্ত্র ‘ইলমে ক্বিরাতের’ প্রতিষ্ঠান।

উপমহাদেশের প্রসিদ্ধ আলেমে দ্বীন, ওলিকুলের শিরোমণি হযরত মাওলানা ক্বারী মুহাম্মাদুল্লাহ হাফেজ্জি হুযুর (রহ.) এবং প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন, মুফতি দীন মুহাম্মাদ খান (রহ.) উভয়েই স্বপ্ন দেখেছিলেন বাংলাদেশের প্রতিটি অঞ্চলে প্রতিটি ঘরে বিশুদ্ধ কুরআন তিলাওয়াতের আওয়াজ পৌঁছানোর মাধ্যমে শুদ্ধরূপে এর শিক্ষা দেওয়া।

হযরত হাফেজ্জি হুযুর (রহ.)এবং মুফতি দ্বীন মুহাম্মাদ খান (রহ.)উভয়েই তাঁদের এই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে পশ্চিম পাকিস্তানে তৎকালীন এশিয়া মহাদেশের অন্যতম প্রসিদ্ধ ক্বারী, রেডিও করাচি এবং পাকিস্তান টেলিভিশন (পিটিভি) এর একমাত্র বাঙালি ক্বারী হযরত মাওলানা ক্বারী মুহাম্মাদ ইউসুফ (রহ.)-কে অনুরোধ করেন তিনি যেন বাংলাদেশে (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) এসে বিশুদ্ধ তিলাওয়াত ও পরিপূর্ণ ক্বিরাতের তা’লিম শুরু করেন। ক্বারী মুহাম্মাদ ইউসুফ (রহ.) সানন্দে হযরতদ্বয়ের এই পরামর্শকে গ্রহন করেন। এরই ফলশ্রুতিতে ১৯৭১ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর হযরত মাওলানা ক্বারী মুহাম্মাদুল্লাহ হাফেজ্জি হুযুর (রহঃ), হযরত মুফতি দ্বীন মুহাম্মাদ খান (রহঃ), উর্দুরোড জামে মাসজিদের সম্মানিত ইমাম ও বড় কাঁটারা মাদরাসার উস্তাদ, চট্রগ্রামের হাফেয মাওলানা মীর আহমাদ সাহেব (রহ.) এবং মাওলানা ক্বারী মুহাম্মাদ ইউসুফ (রহ.) এর উদ্যোগে ঢাকার উর্দুরোড জামে মাসজিদে বাংলাদেশের সর্বপ্রথম ও একমাত্র স্বতন্ত্র ইলমে ক্বিরাতের প্রতিষ্ঠান হিসেবে মাদ্রাসা দারুল কুরআন নামে এর কার্যক্রম শুরু হয়। প্রতিষ্ঠার সময় উপস্থিত ছিলেন খতিবে আজম মাওলানা সিদ্দিক আহমাদ (রহঃ)। উল্লেখ্য যে মাওলানা ক্বারী মুহাম্মাদ ইউসুফ (রহ.) ১৯৭১ সালে সংগঠিত মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের অন্যতম সংগঠক থাকায় মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন পাকিস্তান হতে সবকিছু ত্যাগ করে বাংলাদেশ প্রত্যাবর্তন করেন এবং ১৯৭২ সালে সরকারিভাবে বাংলাদেশের প্রধান ক্বারী (শাইখুল কুররা) হিসেবে নিযুক্ত হন।

প্রতিষ্ঠালগ্নেই অত্র প্রতিষ্ঠানে হযরত মাওলানা ক্বারী মুহাম্মাদ ইউসুফ (রহ.)-এর সাথে শিক্ষক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন বাংলাদেশে নূরানি শিক্ষার পথিকৃৎ হযরত মাওলানা বেলায়েত হুসাইন (রহঃ)।

প্রতিষ্ঠার ৩ বছর পর উর্দুরোড জামে মাসজিদ হতে ‘মাদ্রাসা দারুল কুরআন’ এর কার্যক্রম চকবাজার শাহী মাসজিদে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে শাইখুল কুররা ক্বারী মুহাম্মাদ ইউসুফ (রহ.)-এর সাথে শিক্ষক হিসেবে আরও যোগ দেন বাংলাদেশের প্রখ্যাত ক্বারী, উস্তাদুল কুররা হযরত মাওলানা ক্বারী ওবায়দুল্লাহ (রহঃ)।

হযরত হাফেজ্জী হুজুর (রহঃ), শাইখুল কুররা ক্বারী মুহাম্মাদ ইউসুফ (রহ.)-কে অত্যন্ত ভালোবাসার কারনে তিনি হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর কাছাকাছি থাকার ইচ্ছে পোষণ করলে হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-তাঁকে লালবাগ কিল্লারমোড় মাক্কী মাসজিদের কথা বলেন। পরবর্তীতে হযরত হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)-এর পরামর্শক্রমেই ৮০’র দশকের শুরু হতে লালবাগ কিল্লারমোড় মাক্কী মাসজিদে এর কার্যক্রম পরিচালিত হতে থাকে। পরে সেখানে শিক্ষক হিসেবে আরও যোগ দেন দারুল উলূম দেওবন্দ-এর ক্বিরাত বিভাগের ফারেগ চট্রগ্রামের হযরত মাওলানা ক্বারী গরীবুল্লাহ (রহঃ)।

২০০৩ সালে শাইখুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক (রহ.)এবং জাতীয় মাসজিদের খতীব আল্লামা ওবায়দুল হক (রহ.)-এর দু’আর মাধ্যমে মাদরাসা দারুল কুরআন এর নাম পরিবর্তন করে মাহাদুল ক্বিরাত বাংলাদেশ তথা বাংলাদেশ ক্বিরাত ইন্সটিটিউট রাখা হয়।

২০১২ সাল পর্যন্ত কিল্লারমোড় মাক্কী মাসজিদে এর কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে। বর্তমানে লালবাগের মাসজিদুল গফুরএ এর কার্যক্রম আবাসিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে।

২০১২ সালে ইমামুল কুররা হযরত মাওলানা ক্বারী মুহাম্মাদ ইউসুফ (রহ.)-এর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে উনার সুযোগ্য সাহেবজাদা মাওলানা ক্বারী আহমাদ বিন ইউসুফ আল আযহারী-কে মা’হাদুল ক্বিরাত বাংলাদেশ এর পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব অর্পণ করেন। শাইখ আহমাদ বিন ইউসুফ আল আযহারী বর্তমান বিশ্বের অন্যতম সুপ্রসিদ্ধ ক্বারী যিনি মিশরের আল আযহার-এ ১০ ক্বিরাত এর উপর পড়াশোনা করে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) থেকে ধারাবাহিকভাবে সর্বোচ্চ সনদ পেয়েছেন।

“মাহাদুল ক্বিরাত বাংলাদেশ বাংলাদেশের সর্বপ্রথম ও একমাত্র স্বতন্ত্র ইলমে ক্বিরাতের প্রতিষ্ঠান, যেখানে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই বাংলাদেশের সমস্ত ক্বারীগণ, বিভিন্ন অঞ্চলের উলামায়ে কেরাম, বিভিন্ন মাসজিদের ইমাম ও খতীব, বিভিন্ন মাদরাসার শিক্ষকগণ সহ সর্বসাধারণ মাহাদুল ক্বিরাত বাংলাদেশ-এ ইমামুল কুররা হযরত মাওলানা ক্বারী মুহাম্মাদ ইউসুফ (রহ.)-এর কাছ থেকে বিশুদ্ধ কুরআন তিলাওয়াত ও ক্বিরাতের তা’লীম নিয়ে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সুনামের সাথে কাজ করছেন। বর্তমানে ক্বিরাত বিভাগে বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বিদেশি শিক্ষার্থীরাও পড়াশোনা করছে।

'وَرَتِّلِ الْقُرْآنَ تَرْتِيلًا'-'and Recite the Quran Slowly and Rhythmically'